রাঙামাটি প্রতিনিধি : নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ ২ডিসেম্বর রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে। এই উপলক্ষে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং আলোচনাসভার আয়োজন করে।
আলোচনাসভার আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন, বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন অতিথিরা।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পরিষদের সদস্যবৃন্দ, হস্তান্তরিত বিভাগ ও পরিষদের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ত্রিদীব কান্তি দাশ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরুনেন্দু ত্রিপুরা।
স্বাগত বক্তব্যে সদস্য ত্রিদীব কান্তি দাশ বলেন, এ এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলার অতীত এবং বর্তমান অবস্থার পার্থক্য তুলে ধরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে বলে তিনি জানান। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে যা শান্তিচুক্তির আগে তেমন ভাল ছিলনা। চুক্তির পর শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সরকার ও জনসংহতি সমিতি দু’পক্ষের মধ্যে যে উদ্দেশ্যে চুক্তি হয়েছে সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দু’পক্ষের মধ্যে সমন্বয় থাকলে চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ নিতীশ চাকমা বলেন, শান্তিচুক্তির কারণে রাঙ্গামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে, বিশ^বিদ্যালয় হয়েছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর শান্তিচুক্তির পরে বর্তমানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজসেবা, যুব উন্নয়ন বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা: আশরাফুল ইসলাম বলেন, শান্তিচুক্তির পরে এ এলাকার জনগণ অনেক সুফল ভোগ করছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য এ চুক্তি বিশেষ অবদান রাখছে বলে তিনি সন্তব্য করেন। তিনি সবাইকে পার্বত্য অঞ্চলের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করার জন্য আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্যবাসীর কথা চিন্তা করে পাহাড়ে স্থায়ী সমাধানের লক্ষে এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এই মহান চুক্তির ধারাগুলো তিনি আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়ন করছেন। তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পাহাড়ের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে এবং তা বাস্তবায়ন করছেন। সরকারের চুক্তি ও উন্নয়নে অংশগ্রহণ করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
পাহাড়ে চুক্তির ২৩তম বর্ষপুতি পৃথক পৃথকভাবে পালিত হয় । বিকাল ২ঘটিকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের হল রুমে চুক্তি ২৩তম বর্ষপুর্তি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় । পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ও স্বাক্ষরিত চুক্তির অন্যতম সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা আলোচনার সভার আহবায়ক হিসাবে বলেন, চুক্তির মৌলিক বিষয় এখনো বাস্তবায়ন হয়নি । ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচন ও আঞ্চলিক পরিষদ কোন কার্যক্রম ভুমিকা রাখতে পারছে না । পাহাড়ে যে কোন উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকি -মনিটরিং করার সুযোগ নেই । তাই চুক্তি পুর্ণ বাস্তবায়ন ছাড়া সমস্যা সমাধান সম্ভব নয় ।
অন্যতম বক্তা ছিলেন ,আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমা,মুখ্য নিবার্হী কর্মকতা নির্মল কান্তি চাকমা,আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য নুরুল আলম,নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) সুবর্ণা চাকমা,সুশীল সমাজের প্রতিনিধি জিসান বখতেয়ার ,সমাজ সেবক হারুন মাতব্বর ও সাংবাদিক চৌধুরী হারুনুর রশীদ।
২ ডিসেম্বর বুধবার সকাল ১০ টায় রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমি হল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা কমিটির উদ্যেগে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় ঊষাতন তালুকদার এসব কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ- সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি জাতীয় ও রানৈতিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর সরকার ও পার্বত্য জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। শান্তি চুক্তির সময় অস্ত্র জমা দিয়েছি কোন কিছু রেখে আসি নাই স্বাভাবিক জীবনে এসে নিরাপদে থাকবো শান্তিতে থাকবো এই আশা নিয়ে চুক্তি করেছি অন্য কিছুর উদ্দেশ্য নয় কিন্ত এখন যে জনসংহতি সমিতিকে অস্ত্রধারী বলা হচ্ছে ।
ঊষাতন বলেন, চুক্তি আজ ২৩বছর অতিক্রম হলেও আজও চুক্তির মৌলিক বিষয় গুলো পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে পার্বত্য চট্রগ্রামকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সাধরণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা,পুলিশ, ভূমি ও ভ’মি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নইত্যাদিসহ রাজনৈতিক, প্রশাসিনক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং কার্যাবলী সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। যার ফলে পার্বত্য অঞ্চলে এখন অস্থিতিশীল পরিস্থতি সৃষ্টি হয়েছে।
চৌধুরী হারুনুর রশীদ,রাঙামাটি।